হাউজকিপিং এর ধারণা

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা একটি ভালো অভ্যাস। এ অভ্যাস সকলের সমানভাবে রপ্ত করতে হয়। পেশাগত জীবনে কর্মস্থলকে পরিষ্কার পরিছন্ন রাধা হাউজকিপিং-এর একটি বড় প্রায়োগিক ক্ষেত্র। হেলথকেয়ার ইনডাস্ট্রি একটি সেবামূলক খাত। হাসপাতাল, ক্লিনিক বা বাসাবাড়িতে রোগীর সেবা করার সময় হাউজকিপিং বা ব্যক্তিগত ও কর্মক্ষেত্রের পরিষ্কার পরিছন্নতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় রোগীর স্বাস্থ্য আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। কর্মক্ষেত্র জীবাণুমুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার জন্য কতিপয় নিয়মনীতি অনুসরণ করে চলতে হয়। কোনো একক ব্যক্তি বা দলের পক্ষে সব কিছু পরিচ্ছন্ন, ছিম হাম ও সুন্দর রাখা সম্ভব নয়। এজন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এই অধ্যায়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে কিভাবে একজন কেয়ারগিভার হাউজকিপিং-এর মৌলিক দক্ষতাগুলো প্রয়োগ করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা

  • হাউজকিপিং কী তা বলতে পারবো
  • হাউজকিপিং এর প্রয়োজনীয়তা ব্যখ্যা করতে পারবো 
  • হাউজকিপারের কাজ বর্ণনা করতে পারবো
  • হাউজকিপিং এর বিভিন্ন সরঞ্জামাদি চিহ্নিত করতে পারবো
  • জীবাণুযুক্ত কর্মস্থল প্রস্তুতির ক্ষেত্রে পরিষ্কারকরণের সাধারণ নিতিমালা উল্লেখ করতে পারবো
  • রোগীর থাকার যায়গা পরিষ্কার রাখার উপায় বর্ণনা করতে পারবো
  • রোগীর বিছানা তৈরি করতে পারবো
  • ক্লিনিং আইটেম সংরক্ষণ করতে পারবো

উল্লিখিত শিখনফল অর্জনের লক্ষ্যে এই অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন আইটেমের জব (কাজ) সম্পন্ন করব। এই জবের মাধ্যমে আমরা রোগীর বিছানা তৈরি করতে পারবো। জব সম্পন্ন করার পূর্বে প্রথমেই আমরা প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ জানবো।

 

২.১ হাউজকিপিং (Housekeeping)

হাউজকিপিং শব্দের অর্থ কর্মস্থল সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা ও তার সঠিক তত্ত্বাবধায়ন করা। এটি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত একটি সামগ্রিক কর্মকাণ্ড বুঝায় যার মাধ্যমে যেকোনো সেবামূলক খাতে নিরাপদ, আরামদায়ক ও সম্মানজনক উপায়ে ক্লায়েন্টের সেবা দেওয়া সম্ভব হয়। হাউজকিপিং সেবাটি বেশিরভাগ সময়ে হোটেল ও হসপিটালিটি ইন্ডাষ্ট্রিতে প্রয়োগ করা হলেও বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা খাতেও এর ব্যাপক প্রচলন বাড়ছে। কারণ রোগীর সুস্থতার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমক্ত সুন্দর পরবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালে হাউজকিপিং নামে আলাদা ডিপার্টমিন্টই থাকে। তা সত্ত্বেও ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিষ্ট, প্যাথোলোজিষ্ট এরকম প্রত্যেকেই নিজের কর্মপরিবেশের সাথে সংশ্লিষ্ট হাউজকিপিং কর্মকাণ্ডের সাথে অবশ্যই জড়িত। নার্সগণ কিছু কিছু কাজ সম্পাদন করে থাকেন যেগুলো সরাসরি হাউজকিপিং-এর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন: রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী বেড মেকিং করে দেওয়া, বিছানার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তদারকি করা, ময়লা বিছানার চাদর ওয়াশের জন্য লন্ড্রিতে পাঠানো এবং নতুন চাদর রোগীদের জন্য সরবরাহ করা প্রভৃতি। মূলত হাসপাতালে রোগীর সেবায় পরিষ্কার-পরচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্ত রাখার সাথে সবাই জড়িত। ঠিক তেমনিভাবে কেয়ারগিভারকেও দক্ষতার সাথে হাউজকিপিং সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে যাবতীয় কাজ করতে হয় ।

 

২.১.১ একজন হাউসকিপারের কাজ কী?

হাউজকিপিং-এর প্রাথমিক কার্যাবলির ক্ষেত্রে কেয়ারগিভারকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হয় ।

  • নিয়মিত রোগীর রুম, আসবাবপত্র পরিষ্কার করা, বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার ময়লা হলে বদলে দেওয়া
  • টয়লেটে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (যেমন, সাবান, তোয়ালে ও টয়লেট পেপার) সরবরাহ করা
  • রুম থেকে আবর্জনার বিন সংগ্রহ করে নির্ধারিত জায়গায় রেখে আসা
  • রোগীর রুমের কিংবা কোনো সরঞ্জামের কোনো ক্ষতি হলে সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানানো
  • রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করা
  • পরিষ্কার করার সরঞ্জামের (যেমন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার) রক্ষণাবেক্ষণ করা

কেয়ারগিভারকে হাসপাতাল ও বাসা দুই জায়গাতেই হাউজকিপিং-এর কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়। যেখানেই হউকনা কেনো কেয়ারভিরের জন্য প্রযোজ্য হাউজকিপিং-এর মৌলিক কাজগুলো একই রকম। স্বাস্থ্য খাতে কাজ করতে গেলে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ও সংক্রামক রোগ থেকে নিজেকে এবং অন্যকে রক্ষা করে যেতে হয়। এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জীবানুমুক্তকরণ একটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। এ সম্পর্কে আমরা প্রথম অধ্যায়ে বিস্তারিত জেনেছি। দেখা গেছে কর্মস্থল ও বাসাবাড়িতে কিছু কিছু স্থানে জীবানুর ব্যাপকতর উপস্থিতি বিদ্যমান। যেমন:

১। রোগীর বিছানা ও বালিশ 

২। বিছানার পাশের লকার 

৩। ব্লাড প্রেসার ও স্টেথোস্কোপ মেশিন 

৪। টয়লেট কমোড 

৫। দরজার হাতল বা নব ৬

। টেলিভিশন রিমোট, টেলিফোন, বেসিন প্ৰভৃতি।

 

২.১.২ পরিষ্কার করার সাধারণ নিতিমালা

পরিস্কারের আগে

  • অতিরিক্ত সতর্কতা নেয়ার জন্য পরিবেশ পরীক্ষা করতে হবে। 
  • নির্দেশিত সতর্কতা অনুসরণ করতে হবে।
  • পরিষ্কার করার আগে ছড়ানো ছিটানো জিনিষপত্র থাকলে সেগুলো আগেই সরিয়ে বা গুছিয়ে রাখতে হবে।
  • পরিষ্কারক পদার্থ পাতলা করার জন্য প্রস্তুতকারকের নির্দেশাবলি অনুসরণ করতে হবে। 
  • ঘরে প্রবেশ করার আগে পরিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে। 
  • ঘরে ঢোকার আগে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

পরিস্কারের সময়

  • সর্বনিম্ন নোংরা এলাকা (নিম্ন স্পর্শ) থেকে সর্বাধিক নোংরা এলাকায় (উচ্চ স্পর্শ) এবং উচ্চ পৃষ্ঠ থেকে নিম্ন পৃষ্ঠে পরিষ্কার করতে হবে। 
  • পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করার আগে খালি চোখে দেখা যায় এমন বর্জ্য আগে অপসারণ করতে হবে।
  • অণুজীব ছড়ানো রোধ করতে বা কমাতে কোনো কিছু ঝাড়া যাবে না। 
  • কখনই মপস ও ডাস্টার ঝাঁকানো যাবে না ।
  • ভেজা/স্যাঁতসেঁতে মপ ব্যবহারের আগে শুকনো ডাস্টার দিয়ে মুছে নিতে হবে। 
  • ভেজা মোপিং করার আগে পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
  • মপের কাপড় 'ডাবল-ডিপ' করা উচিৎ নয় (পরিষ্কার দ্রবণে শুধুমাত্র একবার মপটি ডুবিয়ে নিতে হবে, কারণ এটি একাধিকবার ডুবিয়ে দিলে এটি পুনরায় দূষিত হতে পারে)
  • দ্রবণে মপ পুনরায় ডুবানোর আগে ১২০ বর্গফুট এলাকা মুছতে হবে। 
  • ১২০ বর্গফুট এলাকা পরিষ্কার করার পরে পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত তরল পরিবর্তন করতে হবে
  • মপ পরিবর্তন করতে হয় নিম্নোক্ত ঝুঁকির তালিকা অনুযায়ীঃ
  • উচ্চ ঝুকিপূর্ণ স্থান: প্রত্যেক শিফটে 
  • মধ্যম ঝুকিপূর্ণ স্থান: প্ৰতিদিন
  • নিম্ন ঝুকিপূর্ণ স্থান: সপ্তাহে অন্তত একদিন
  • প্রস্তুতকারকের নির্দেশ অনুযায়ী পরিষ্কার সমাধান বা পরিবর্তন করতে হয়। ভারী দূষিত এলাকায় ঘন ঘন, যখন দৃশ্যত নোংরা হয় এবং রক্ত ও শরীরের তরল ছিটকে পরিষ্কার করার পরপরই পরিবর্তন করতে হয়।
  • সূঁচ এবং অন্যান্য ধারালো বস্তুর জন্য সতর্ক থাকতে হবে। পাংচার প্রুফ পাত্রে শার্পগুলো নিরাপদে হ্যান্ডেল এবং ডিসপোজ করতে হবে। সুপারভাইজারকে প্রয়োজনে রিপোর্ট করতে হবে।
  • বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দেশিত প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখতে হবে, হাত দিয়ে ময়লাপূর্ণ ব্যাগে সংকুচিত করা যাবে না।
  • রোগীর কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।

 

পরিস্কারের পর

বাসা হউক কিংবা হাসপাতালে হউক, রোগীর থাকা ও বিচরন যায়গা পরিষ্কার রাখা কেয়ারগিভারের দায়িত্ব। এ পরিষ্কার করাটা পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী করতে হয়। যেমন:

১। মুল্যায়ন

  • অতিরিক্ত সতর্কতা লক্ষণ পরীক্ষা কর এবং নির্দেশিত সতর্কতা অনুসরণ কর। 
  • কি প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন (যেমন, টয়লেট পেপার, কাগজের তোয়ালে, সাবান, অ্যালকোহল- ভিত্তিক হ্যান্ড রাব (গ্লাভস, ধারালো পাত্র) এবং কোনো বিশেষ উপকরণ প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করতে রোগীর বা স্বজনদের সাথে কথা বলতে হবে এবং নিজে পর্যালোচনা করতে হবে।

২। সরবরাহ সংগ্রহ

  • পরিষ্কার কাপড়ের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। 
  • প্রস্তুতকারকের নির্দেশ অনুসারে নতুন জীবাণুনাশক দ্রবন প্রস্তুত করতে হবে।

৩। হাত ধুয়ে গ্লাভস পরে নিতে হবে।

৪। পরিষ্কার ঘর, পরিষ্কার থেকে নোংরা এবং ঘরের উঁচু থেকে নিচু যায়গায় কাজ করা:

  • প্রতিটি রোগীর বিছানার জায়গা পরিষ্কার করার জন্য ভালো কাপড় ব্যবহার করতে হবে 
  • দরজা, দরজার হাতল, পুশ প্লেট এবং ফ্রেমের স্পর্শ করা জায়গাগুলো পরিষ্কার করতে হয় আগে।
  • দৃশ্যমান ময়লা আগে পরিষ্কার করে নিতে হবে। 
  • বৈদ্যুতিক সুইচ পরিষ্কার করতে হবে।
  • চেয়ার, জানালার সিল, টেলিভিশন, টেলিফোন, কম্পিউটার কীপ্যাড, ওভার বেড টেবিল ইত্যাদি সহ রুমের সমস্ত আসবাব এবং অনুভূমিক পৃষ্ঠগুলো পরিষ্কার করতে হবে ।
  • সাকশন বোতলের উপরিভাগ, ইন্টারকম এবং রক্তচাপ ম্যানোমিটারের পাশাপাশি স্যালাইনের স্টান্ড থাকলে সেগুলো মুছতে হবে।
  • বেডরেইল এবং কলিং বেল পরিষ্কার করতে হবে।
  • বাথরুম ভালোভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 
  • ঘরের মেঝে ভালোভাবে পরিষ্কার ও জীবানুমক্ত করতে হবে।

৫। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

  • ময়লা কাপড় ধোয়ার জন্য নির্ধারিত পাত্রে করতে হবে।
  • ধারালো বর্জ্য রাখার পাত্র দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হলেই সেগুলো যথাস্থানে ফেলে পাত্রটি খালি করতে হবে।
  • নির্ধারিত কালার কোডের বিনে বর্জ্য ফেলতে হবে। 
  • নিয়মিতভাবে বর্জ্য অপসারণ করতে হবে।

৬। সবশেষে নিজেকে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। 

৭। প্রয়োজন অনুযায়ী পরিষ্কারক জিনিসপত্র সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেমন: টিস্যু, সাবান, ডিটারজেন্ট, গ্লাস ক্লিনার, টাওয়েল, মপ, ডাস্টার প্রভৃতি।

 

২.২ গৃহ পরিবেশে নিরাপত্তা রক্ষায় করণীয়

গৃহের সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন, নিরাপদে চলাফেরা, আরাম ও বিশ্রামের জন্য গৃহ পরিবেশ পরিষ্কার- পরচ্ছন্ন, পরিপাটি রাখা প্রয়োজন। গৃহে এরকম পরিবেশ বজায় রাখলে রোগীর জন্য গৃহ নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়। বাড়ির পরিবেশ যদি নিরাপদ না থাকে তবে নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে কেয়ারগিভারের করণীয় বিষয়সমূহ হচ্ছে:

  • আসবাবপত্র যথাস্থানে রাখা, যাতে করে ঘরের মধ্যে চলাফেরা করতে রোগীর কোনো অসুবিধা না হয়।
  • কোনো আসবাবপত্র ভেঙে গেলে সেটা সরিয়ে ফেলা বা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেরামত করা।
  • গৃহে চলাচলের জায়গায়, সিঁড়িতে, টয়লেটে, রান্নাঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখা। 
  • সিঁড়ি, বেলকোনি ও ছাদের চারপাশে রেলিং এর ব্যবস্থা রাখা
  • বাথরুম, রান্নাঘর, গোসল খানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, মেঝে যাতে পিচ্ছিল না থাকে সে জন্য ঝাড়ু বা ব্রাশ দিয়ে ঘষে শ্যাওলা বা পিচ্ছিল পদার্থ দূর করা।
  • মেঝেতে কাচের টুকরা, পিন, সুচ ইত্যাদি পড়ে থাকতে দেখলে সাথে সাথে তা তুলে নিরাপদ স্থানে ফেলা।
  • ঘরের মেঝেতে পানি পড়লে সাথে সাথে মুছে ফেলা।
  • ছুরি, কাঁচি, বটি, নেইল কাটার এরকম ধারালো বস্তু কাজ শেষে যথাস্থানে গুছিয়ে রাখা। রোগী বা শিশুদের কাছ থেকে নিরাপদ অবস্থানে রাখতে হবে।
  • রান্নাঘরের ময়লা আবর্জনা ডাস্টবিন বা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা।
  • বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেলে বা সুইচ ভেঙে পেলে তা মেরামত করার জন্য সাথে সাথে যথাযথ ব্যক্তিকে অবহিত করা।

পরিবারের অন্যান্যদের সহযোগিতা ও প্রচেষ্টা ছাড়া রোগীর কক্ষে তথা গৃহে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা কেয়ারপিস্তারের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা। এজন্য এসকল ক্ষেত্রে কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে রোগীর স্বজনদের অন্তর্ভুক্ত করা কেয়ারপিতারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

২.২.১ রোগীর ঘর বা বেডরুম পরিস্কার করা:

বাড়িতে একজন রোগী বেশিরভাগ সময় তার শোবার ঘরেই অবস্থান করে থাকেন। আবার হাসপাতালেও রোগীরা একটি নির্দিষ্ট কক্ষে অবস্থান করেন। উভয় ক্ষেত্রেই মৌলিক কার্যাবলি একই রকম। এই অংশে আমরা হোম কেয়ার সেটিংসে রোগীর শোবার ঘর পরিষ্কারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরবো। রোগীর শোবার ঘর পরিষ্কারের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত:

১. বিছানা, বিছানার চাদর ও বালিশ ইত্যাদি প্রস্তুত করা ও গুছিয়ে রাখা 

২. বিছানা ও বিছানার চারপাশ পরিষ্কার করা 

৩. বিছানার পাশে অবস্থিত আসবাবপত্র পরিষ্কার রাখা 

৪. অন্যন্য আসবাব, চেয়ার, টেবিল, ওয়াল কেবিনেট, আলমারি, ওয়্যারড্রোব ইত্যাদি পরিষ্কার করা 

৫. ড্রেসিং টেবিল, সাইড টেবিল, সোফা ইত্যাদি গুছিয়ে রাখা 

৬. কার্পেট পরিষ্কার করা 

৭. মেঝে মুছে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা

এর মধ্যে ঘরে বিভিন্ন দ্রব্যাদি স্থাপন ও পুনঃস্থাপনও অন্তর্ভুক্ত। সার্বিক কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো রোগীর জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা

 

২.২.২ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন পন্য ও সরঞ্জাম ব্যবহার করা

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন পন্য ও সরঞ্জাম সঠিক উপায়ে ব্যবহার ও সংরক্ষণ করতে হয় কখন কোনো ধরনের পদার্থ ব্যবহার করতে হবে সেটি জানতে হয়, যার মধ্যে আছে বেডরুম পরিষ্কার করার ৪টি মৌলিক এজেন্ট যথা:

১. সাধারণ পরিষ্কার ও চেয়ার টেবিল মোছার জন্য ক্লিনিং এজেন্ট 

২. সাবান ও ডিটারজেন্ট দেওয়া পানি গোসল করা, ধোয়া, কাপড় কাচা ও থালা-বাসন মাজার জন্য ব্যবহার করা হয় 

৩. পরিষ্কার করা কঠিন এমন জায়গাগুলোকে ঘষে পরিষ্কার করার জন্য ক্লিনসার 

৪. বিশেষ জিনিষপত্র পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ ধরনের ক্লিনিং এজেন্ট যেমন: গ্লাস ক্লিনার।

পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত পণ্যগুলো মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে। এজন্য এই কাজগুলো সর্বদা গ্লাস ও অন্যন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পরিধান করে সম্পাদন করা উচিৎ। রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে কাজ করার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তারপর পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় রাসায়নিক পদার্থটি ভালোমত কাজ নাও করতে পারে। বাথরুমের অভ্যন্তরের মেঝে, দেওয়াল বা অন্য কোনো পৃষ্ঠ জীবাণুমুক্ত করার জন্য যদি নির্দেশিত ক্যামিকেল না পাওয়া গেলে ব্লিচিং পাউডারের দ্রবন ব্যবহার করা যেতে পারে। কাজের শুরুতেই ব্লিচিং পাউডার দ্রবন তৈরি করে নেয়া উচিৎ প্রতিদিন।

ময়লা ফেলা বা ডিজপোসিং অফ ট্র্যাশ

রোগীর সেবায় এবং লাইট হাউজকিপিং করতে গেলে অনেক ময়লা আবর্জনা উৎপন্ন হতে পারে। পেশেন্ট কেয়ারে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অধ্যায়ে আমরা এ সম্পর্কে জেনেছি। বাসাবাড়িতেও অনেক সময় রোগীর সাথে সংশ্লিষ্ট ময়লা আবর্জনা ফেলার কাজটি কেয়ারগিভারকে করতে হয়। এ ময়লা আবর্জনা হতে পারে বিভিন্ন ধরনের, যেমন: খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ, বডি ফ্লুইড্‌স, কাগজের টুকরা বা অন্যান্য শুকনো আবর্জনা, ঔষধের খালি প্যাকেট ইত্যাদি। প্রতিদিনের ময়লা ট্র্যাশব্যাগে ভালোমতো বেঁধে ডাস্টবিনে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় ঘর দুর্ঘন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং বিভিন্ন রোগ জীবানুর আবির্ভাব ঘটতে পারে।

 

২.৩ স্বাস্থ্যসেবার ব্যবহৃত কতিপয় আসবাবপত্র

স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত আসবাবপত্র সমূহকে মূলত মেডিকেল ফার্নিচার বলা হয়। এর পাশাপাশি সাধারণ ফার্নিচারও ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন:

ক. এডজাস্টেল বেড, যেগুলো রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী উপর-নিচে, সামনে-পিছনে সরিয়ে এডজাস্ট করা যায়। এর সাথে থাকে বিশেষ রোগীর জন্য বিশেষ ধরনের বেড যেমন: এইর বেড, বিকল্প প্রেসার বেড, অপারেশন বেড, ডেলিভারি বেড, চাইল্ড কেয়ার বেড ইত্যাদি। 

খ. ওভার বেড টেবিল, বিশেষ ধরনের টেবিল যেগুলো রোগীর বিছানার পাশ বা উপর দিয়ে রোগীর কাছ পর্যন্ত নেয়া যায়। বিছানায় বিভিন্ন স্বাভাবিক কাজকর্ম যেমন: খাওয়া, সুখ ধোয়া, লেখাপড়া করা প্রভৃতি কাজে এগুলো বেশ উপযোগী। 

গ. পেশেন্ট ওয়্যারড্রোব যেখানে রোগীর ঔষধপত্র, টেস্ট রিপোর্ট ইত্যাদি রাখা হয়।

অন্যান্য জিনিষপত্র যেমন: বার্থিং ব্লাংকেট, ড্র পীট, বেড প্রটেক্টর, ফোম প্যান্ড, ফুট বোর্ড বা ফুট রেন্ট, বিছানার রেলিং বা সাইড রেইল ইত্যাদি।

 

২.৪ বেড মেকিং-এর পদ্ধতি

সুন্দরভাবে রোগীর প্রয়োজন ও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী নির্দেশিতভাবে বিছানা প্রস্তুত করাকেই মেডিকেলের পরিভাষায় বেড মেকিং বলা হয়। রোগীর বিছানা অনেক ধরনের হতে পারে যেমন: ক্লোড ৰেড, ওপেন বেড, এডমিশন বেড, অকুপাইড বেড, অপারেশন বেড, কার্ডিয়াক বেড, ফ্র্যাকচার বেড, এম্পুটেশন বেড প্রভৃতি। বেড মেকিং বা বিছানা প্রস্তুত ও টিপ-টপ রাখা একজন কেয়ারগিভারের অত্যাবশ্যকীয় একটি দায়িত্ব। নিচে এর কিছু সাধারণ খাল উল্লেখ করা হলো :

১. বেস্ত মেকিং এর প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে, যেমন: বেডশীট, রাবার শীট, বালিশ, বালিশের কাভার ইত্যাদি। 

২. রোগীর কাছে গিয়ে সম্ভাষণ করে অনুমতি নিতে হবে এবং কি করতে চাচ্ছি তার বিবরণ দিতে হবে। 

৩. রোগীর প্রাইভেসি রক্ষা করতে হবে।

৪. রোগী যদি সচেতন হয় ও সহযোগীতা করতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে বিনয়ের সাথে বিছানা থেকে নেমে অন্য কোথায় বসতে বলতে হবে। সেক্ষেত্রে ওপেন বেড প্রস্তুত করতে পারবো। আর যদি রোগী অচেতন হন অথবা বিছানা থেকে নামতে না সক্ষম হন তাহলে আমরা প্রস্তুত করবো অকুপাইড বা আবদ্ধ বেড, অর্থাৎ যে বেডে রোগী ইতোমধ্যেই আছেন।

 

ওপেন বেড মেকিং এর ধাপসমুহ

১. প্রথমেই বালিশ কাভার খুলে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে বালিশটিকে শুকনো ও পরিষ্কার জায়গায় রাখতে হবে। 

২. টপ শীট, ড্র শীট, ম্যাকিনটোশ (যদি থাকে) সরিয়ে নিয়ে ময়লা রাখার পাত্রে রাখতে হবে। 

৩. রোল করে বা ভাঁজ করে ব্যবহৃত চাদরটিও সরিয়ে নিতে হবে। কোনোভাবেই এটিকে জোরে ঝাড়া যাবে না।

৪. শুকনো ডাস্টার দিয়ে ম্যাট্রেসটি পরিষ্কার করতে হবে। 

৫. এরপর পরিষ্কার বিছানার চাদর বিছিয়ে ম্যাট্রেসের চারপাশে ভালোভাবে গুঁজে দিতে হবে যাতে কোথাও কোনো অংশ কুচকে না থাকে। 

৬. এরপর একে এক পরিষ্কার টপ শীট, ড্র শীট বা ম্যাকিনটোশ প্রয়োজন মত বিছিয়ে দিতে হবে।

 

ক্লোজ্‌ড বেড মেকিং এর ধাপসমূহ

  • রোগীকে এক পাশে আলতো করে রোল করে এমনভাবে সরিয়ে নিতে হবে যাতে রোগী কোনো ব্যথা না পায় বা পড়ে না যায় ।
  •  এরপর বেডশীট উঠিয়ে ধীরে ধীরে রোল করে রোগীর কাছ পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে এবং নতুন বেড় শীট সেই খালি জায়গায় অর্ধেকটা বা তার কম বিছিয়ে দিতে হবে।
  • এরপর রোগীকে গড়িয়ে অন্যপাশে যেখানে আংশিক বিছানা চাদর পাতা হয়েছে সেখানে নিতে হবে। 
  • তারপর পুরানো বেডশীট বিছানার বাকি অংশ থেকে সম্পূর্ণ অপসারণ করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। 
  • রোগীর শরীরের নিচ দিয়ে এবার আংশিক পাতা চাদরটি ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে বাকি অংশ জুড়ে বিছিয়ে দিতে হবে
  • এরপর ওপেন বেডের মতই এটিকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে দিতে হবে যাতে করে কোনো কুচকানো কাপড় না থাকে।
  • প্রয়োজনবোধে রাবার শীট, ড্র শীট, কম্বল ইত্যাদি সংযোজন করা যেতে পারে। 
  • যথাস্থানে প্রয়োজনমত বালিশ রাখতে হবে এবং রোগীকে আরামদায়ক অবস্থানে যেতে সহায়তা করতে হবে।
  • গ্লাভ্স খুলে ময়লা বেড শীট ধোপাখানায় বা বাড়িতে ধোয়ার জন্য দিতে হবে। 
  • সবশেষে হ্যান্ড ওয়াশ করে নিতে হবে।

 

জব শীট: বেড মেকিং এর পদ্ধতি

পারদর্শিতার মানদন্ড

  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (পিপিই) ও পোশাক পরিধান করা; 
  • প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের স্থান প্রস্তুত করা; 
  • জব অনুযায়ী টুলস, ইকুইপমেন্ট, মেটেরিয়্যাল সিলেক্ট ও কালেক্ট করা; 
  • কাজ শেষে নিয়ম অনুযায়ী কাজের স্থান পরিষ্কার করা; 
  • অব্যবহৃত মালামাল নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা; 
  • নষ্ট মালামাল (Wastage) এবং স্ক্র্যাপগুলো (Scrap) নির্ধারিত স্থানে ফেলা; 
  • কাজ শেষে চেক লিস্ট অনুযায়ী টুলস ও মালামাল জমা দেওয়া ইত্যাদি।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE): প্রয়োজন অনুযায়ী।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুল্স, ইকুইপমেন্ট ও মেশিন): নতুন বিছানার চাদর, বালিশ ও বালিশের কাভার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ম্যাকিনটোশ, টপ শীট, ড্র-শীট, ময়লা ফেলার বিন ইত্যাদি।

কাজের ধারা: সাধারণ নির্দেশনা-

১. বেড মেকিং এর প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে, যেমন: বেডশীট, রাবার শীট, বালিশ, বালিশের কাভার ইত্যাদি। 

২. রোগীর কাছে গিয়ে সম্ভাষণ করে অনুমতি নিতে হবে এবং কি করতে চাচ্ছি তার বিবরণ দিতে হবে। 

৩. রোগীর প্রাইভেসি রক্ষা করতে হবে। 

৪. রোগী যদি সচেতন হয় ও সহযোগীতা করতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে বিনয়ের সাথে বিছানা থেকে নেমে অন্য কোথায় বসতে বলতে হবে। সেক্ষেত্রে ওপেন বেড প্রস্তুত করতে পারবো। আর যদি রোগী অচেতন হন অথবা বিছানা থেকে নামতে সক্ষম না হন তাহলে আমরা প্রস্তুত করবো অকুপাইড বা আবদ্ধ বেড়, অর্থাৎ যে বেডে রোগী ইতোমধ্যেই আছেন।

 

ওপেন বেড মেকিং এর ধাপসমূহ

১. প্রথমেই বালিশ কাভার খুলে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে বালিশটিকে শুকনো ও পরিষ্কার জায়গায় রাখতে হবে। 

২. টপ শীট, ড্র শীট, ম্যাকিনটোশ (যদি থাকে) সরিয়ে নিয়ে ময়লা রাখার পাত্রে রাখতে হবে। 

৩. রোল করে বা ভাঁজ করে ব্যবহৃত চাদরটিও সরিয়ে নিতে হবে। কোনোভাবেই এটিকে জোরে ঝাড়া যাবে না। 

৪. শুকনো ডাস্টার দিয়ে ম্যাট্রেসটি পরিষ্কার করতে হবে। 

৫. এরপর পরিষ্কার বিছানার চাদর বিছিয়ে ম্যাট্রেসের চারপাশে ভালোভাবে গুজে দিতে হবে যাতে কোথাও কোনো অংশ কুচকে না থাকে। 

৬. এরপর একে এক পরিষ্কার টপ শীট, ড্র শীট বা ম্যাকিনটোশ প্রয়োজন মত বিছিয়ে দিতে হবে

অর্জিত দক্ষতা/ফলাফল: প্রশিক্ষণার্থী এই কাজটি ভালোভাবে কয়েকবার অনুসরণ করার পর রোগীর বিছানা প্রস্তুত বা বেড মেকিং এর ধাপসমূহ সম্পন্ন করতে পারবে।

ফলাফল বিশ্লেষণ ও মন্তব্য: আশাকরি বাস্তব জীবনে তুমি এর যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবে।

 

 

Content added || updated By

অনুশীলনী

Please, contribute by adding content to অনুশীলনী.
Content
Promotion